যে ভুল করে সে মানুষ, যে ভূল সংশোধন করে সে জ্ঞানী,যে ভুল জানা সত্তেও তার উপর অবিচল থাকে সে শয়তান-
বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২
বুধবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১২
দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শণ করা ,জাতীয় পতাকাকে দাড়িয়ে সম্মান দেয়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে ??
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে
প্রথমত,
জাতীয় সংগীত বাজানো কিংবা শ্রবণ করা কি হারাম? জাতীয় সংগীত বাজানো হল নাকি কোন গান বাজানো হল না অন্য কিছু বাজানো হল এতে কোন বিশেষ পার্থক্য নেই।
জাতীয় সংগীত বাজানো কিংবা শ্রবণ করা কি হারাম? জাতীয় সংগীত বাজানো হল নাকি কোন গান বাজানো হল না অন্য কিছু বাজানো হল এতে কোন বিশেষ পার্থক্য নেই।
দ্বিতীয়ত,
বিনয়াবনত ও ভক্তি সহকারে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা কারো জন্যেই মানানসই নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি আল্লাহর জন্যে করা হয়ে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও”। [সূরা বাকারাহ ২:২৩৮]
বিনয়াবনত ও ভক্তি সহকারে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা কারো জন্যেই মানানসই নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি আল্লাহর জন্যে করা হয়ে থাকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, “আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও”। [সূরা বাকারাহ ২:২৩৮]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার কারণে,
মানুষের পরে অন্যতম শেষ্ঠ সৃষ্টি (ফেরেশতাগণ) শেষ বিচারের দিনে সারিবদ্ধ হয়ে
দাঁড়াবেন এবং কেউ কোন কথা বলবেন না যতক্ষণ না আল্লাহ কাউকে কথা বলার অনুমতি
প্রদান করেন। (
অর্থাৎ
তারা
দাঁড়িয়ে নীরবতা
পালন
করবেন)। মহান আল্লাহ
বলছেন,
“যেদিন রূহ ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে
দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতিত কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে
সত্যকথা বলবে”। [সূরা নাবা
৩৮]
যে কেউ কোন
সৃষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর প্রতি এই দাবী করে যে তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন
করতে হবে, তার মানে হল সে সেই ব্যক্তি বা বস্তুকে এমন একটি অধিকার প্রদান করল যা
কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার হক বা অধিকার।
এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে লোকেরা তার
সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক তাহলে সে যেন জাহান্নামে নিজের বাসস্থান করে নেয়”। (তিরমিযি, ২৭৫৫;
হাদীসটি সহীহ, আলবানী একে সহীহ বলেছেন সহীহ আল তিরমিযিতে) এর কারণ, এটি এমন একটি
সম্মান এবং শক্তি ও গর্বের অংশ যা কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার
অধিকার। (দ্র তাফসীর আল-তাহির ওয়াল-তানভির, আল তাহির ইবন আশুর কর্তৃক ১৫/৫১)
খলিফা আল
মাহদি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে উপস্থিত সব লোকেরা দাঁড়িয়ে গেল
কিন্তু ইমাম আবি যি’ব দাঁড়ালেন
না। তাকে একথা বলা হল; দাঁড়াও, ইনি আমিরুল মুমিনিন। তিনি বললেনঃ লোকেদের
কেবলমাত্র তাঁর সম্মানে দাঁড়ানো উচিত যিনি সমস্ত জগতসমূহের প্রভূ। আল মাহদি
বললেনঃ “তাঁর জন্যেই তা, আমার মাথার সবগুলো
চুলও যেন দাঁড়িয়ে যায়”।
সিয়ার আ’লাম আল-নুবালা’ (৭/১৪৪)
স্টান্ডিং
কমিটির সম্মানিত আলেমগণের নিকট জানতে চাওয়া হয়েছিল; জাতীয় পতাকা কিংবা জাতীয়
সংগীতের প্রতি দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের অনুমতি আছে কি?
তারা জবাবে বলেছেনঃ একজন মুসলমানের জন্যে এই অনুমতি নেই যে, সে জাতীয়
সঙ্গীত কিংবা পতাকার জন্যে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করবে, বরং এটি একটি
নিন্দনীয় বিদ’আত যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সময় প্রচলিত ছিল না, আর খুলাফায়ে রাশেদিনের
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) সময়েও এর কোন প্রচলন ছিল না। এবং এটা পরিপূর্ণ তাওহীদের
শিক্ষা ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের
পরিপন্থী। এটি এমন একটি মাধ্যম যা শিরকের দিকে চালিত করে এবং কুফফারদের নিন্দনীয়
আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণের দোষে দুষ্ট, উপরন্তু এর দ্বারা তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের
প্রতি তারা যেভাবে সম্মান দেখায় ও তাদের আচার অনুষ্ঠানের অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন।
আর আল্লাহই
হলেন সকল শক্তির উৎস। আল্লাহ তাঁর রাসূল ও তাঁর পরিবার এবং সাহাবাগণের উপর দরুদ ও
সালাম বর্ষণ করুন।
ফাতাওয়া আল
লাজানাহ আল দায়িমা (১/২৩৫)
আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
কোন ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা সম্পর্কিত তিনটি হাদীস
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবায়ে কিরামগণ সরাসরি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ব শরীরে কোন মজলিসে আগমন হলেও দাঁড়াতেন না। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'সাহাবায়ে কিরামের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলো না। অথচ তাঁরা যখন তাঁকে দেখিতেন তখন দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা জানতেন যে, তিনি ইহা পছন্দ করেন না'। (তিরমিযি, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ)
- মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইহাতে আনন্দ পায় যে, লোকজন তাহার জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় স্থির হয়ে থাকুক, তবে সে যেন নিজের জন্য জাহান্নামে বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়'। (আবু দাউদ)
- আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 'একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম লাঠিতে ভর করে ঘর হতে বাইরে আসলেন, আমরা তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়ালাম। তখন তিনি বললেন, 'তোমরা আজমী (অমুসলিম) লোকদের ন্যায় দাঁড়াইও না। তারা এইভাবে দাঁড়াইয়া একে অপরকে সম্মান প্রদর্শন করে'। (আবু দাউদ)
- তবে কোন প্রয়োজনে দাঁড়ানো, যেমন সা'দ (রা) অসুস্থ ছিলেন বিধায় তাঁকে সওয়ারী থেকে নামতে লোকেরা সাহায্য করেছেন, তা দূষণীয় নয়।আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যখন বনু কুরাইযা সা'দ ইবনে মুয়ায রাদিয়াল্লাহুর ফয়সালায় সম্মতি প্রকাশ করল তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ডেকে পাঠালেন। আর সা'দ রাদিয়াল্লাহু আনহু হুজুরের গৃহের নিকটেই অবস্থান করছিলেন। তিনি একটি গাধার উপরে সওয়ার হইয়া আসিলেন। যখন তিনি মসজিদের নিকটে পৌঁছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনসার সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন, 'তোমরা তোমাদের সর্দারের প্রতি দাঁড়াইয়া যাও'। (বুখারী ও মুসলিম)
·
কারও আগমনের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে
ইসলামের বিধান কি?
·
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে
কারও আগমনের সাথে উঠে দাঁড়ানোর ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ একটি বিস্তারিত উত্তর প্রদান করেছেন, শরীয়াহর দলীলের উপর ভিত্তি করে, তাঁর এ মতামত উল্লেখ করা হলঃ
কারও আগমনের সাথে উঠে দাঁড়ানোর ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ একটি বিস্তারিত উত্তর প্রদান করেছেন, শরীয়াহর দলীলের উপর ভিত্তি করে, তাঁর এ মতামত উল্লেখ করা হলঃ
·
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা খোলাফায়ে রাশেদীনের সমকালীন সালাফগণের কারোরই এই রীতি বা অভ্যাস ছিল না যে তাঁরা প্রতিবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) দেখামাত্রই উঠে দাঁড়িয়ে যেতেন, যেটা অনেক মানুষ করে থাকে । বরং আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সাহাবায়ে কিরামের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলো না। অথচ তাঁরা যখন তাঁকে দেখিতেন তখন দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা জানতেন যে, তিনি ইহা পছন্দ করেন না”। ( তিরমিযি ২৭৫৪, সহীহ তিরমিযিতে হাদীসটি আলবানী কর্তৃক সহীহ) কিন্তু তাঁরা তাঁর জন্যে দাঁড়াতে পারতেন যে বাইরে থেকে ফিরত, তাকে স্বাগত জানানোর জন্যে, যেমন বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইকরিমা’র জন্য উঠে দাঁড়ান, এবং তিনি আনসারগণকে বলেছিলেন যখন সা’দ বিন মুয়াজ এসেছিলেন, “তোমরা তোমাদের সর্দারের জন্য উঠে দাঁড়াও”; (বুখারী ৩০৪৩, মুসলিম ১৭৬৮)। আর এই ঘটনাটি ছিল যখন তিনি বনু কুরাইজার ব্যাপারে বিচারের রায় প্রদান করতে এসেছিলেন কারণ তারা বলেছিল যে তাঁর রায় তারা গ্রহণ করবে।
মানুষের যা করা উচিত তা হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমকালীন সালাফগণের রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করা, কারণ তারা হলেন সর্বোত্তম প্রজন্ম এবং সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর বাণী, এবং সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথ নির্দেশনা। কেউ যেন মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়, কিংবা শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এর থেকে নিকৃষ্ট কিছু অনুসরণ করে। এবং নেতা কিংবা প্রধানগণ যেন সাধারণের মাঝে এমন কোন কিছুর অনুমোদন প্রদান না করেন যে তাকে দেখামাত্রই সাধারণ লোকদের উঠে দাঁড়াতে হবে, বরং মানুষের উচিত হল সহজ-সাধারণ আচরণের দ্বারা তাকে স্বাগত জানানো।
আর দূর থেকে ভ্রমণ করে ফিরে এসেছে এমন লোকের ব্যাপারে উঠে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য যদি হয় তাকে স্বাগত জানানো তাহলে তা সুন্দর আচরণ। আর জনসাধারণের রীতিনীতি যদি এমন হয় যে, উঠে দাঁড়ানোর মাধ্যমে আগত ব্যক্তিকে সম্মান দেখানো হয় এবং যদি তারা উঠে না দাঁড়ায় তাহলে সে ব্যক্তি অপমানিত বোধ করে কিংবা সে ব্যক্তি সুন্নাহ অনুসারে আচরণ জানে না, সেক্ষেত্রে আগত ব্যক্তির জন্যে উঠে দাঁড়ানোই অপেক্ষাকৃত ভালো আচরণ, কারণ এর দ্বারা তাদের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হতে পারে এবং তাদের অন্তর থেকে ঘৃণা ও বিদ্বেষ দূর করে দিবে। কিন্তু লোকটি যদি সুন্নাহ অনুসারে আচরণ সম্পর্কে অভ্যস্ত থাকে তাহলে উঠে না দাঁড়ানো তাকে অপমানিত করবে না।
“রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিংবা খোলাফায়ে রাশেদীনের সমকালীন সালাফগণের কারোরই এই রীতি বা অভ্যাস ছিল না যে তাঁরা প্রতিবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে) দেখামাত্রই উঠে দাঁড়িয়ে যেতেন, যেটা অনেক মানুষ করে থাকে । বরং আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সাহাবায়ে কিরামের নিকট রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলো না। অথচ তাঁরা যখন তাঁকে দেখিতেন তখন দাঁড়াতেন না। কেননা, তাঁরা জানতেন যে, তিনি ইহা পছন্দ করেন না”। ( তিরমিযি ২৭৫৪, সহীহ তিরমিযিতে হাদীসটি আলবানী কর্তৃক সহীহ) কিন্তু তাঁরা তাঁর জন্যে দাঁড়াতে পারতেন যে বাইরে থেকে ফিরত, তাকে স্বাগত জানানোর জন্যে, যেমন বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইকরিমা’র জন্য উঠে দাঁড়ান, এবং তিনি আনসারগণকে বলেছিলেন যখন সা’দ বিন মুয়াজ এসেছিলেন, “তোমরা তোমাদের সর্দারের জন্য উঠে দাঁড়াও”; (বুখারী ৩০৪৩, মুসলিম ১৭৬৮)। আর এই ঘটনাটি ছিল যখন তিনি বনু কুরাইজার ব্যাপারে বিচারের রায় প্রদান করতে এসেছিলেন কারণ তারা বলেছিল যে তাঁর রায় তারা গ্রহণ করবে।
মানুষের যা করা উচিত তা হল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমকালীন সালাফগণের রীতি-পদ্ধতি অনুসরণ করা, কারণ তারা হলেন সর্বোত্তম প্রজন্ম এবং সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর বাণী, এবং সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথ নির্দেশনা। কেউ যেন মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেয়, কিংবা শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের পথ নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এর থেকে নিকৃষ্ট কিছু অনুসরণ করে। এবং নেতা কিংবা প্রধানগণ যেন সাধারণের মাঝে এমন কোন কিছুর অনুমোদন প্রদান না করেন যে তাকে দেখামাত্রই সাধারণ লোকদের উঠে দাঁড়াতে হবে, বরং মানুষের উচিত হল সহজ-সাধারণ আচরণের দ্বারা তাকে স্বাগত জানানো।
আর দূর থেকে ভ্রমণ করে ফিরে এসেছে এমন লোকের ব্যাপারে উঠে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য যদি হয় তাকে স্বাগত জানানো তাহলে তা সুন্দর আচরণ। আর জনসাধারণের রীতিনীতি যদি এমন হয় যে, উঠে দাঁড়ানোর মাধ্যমে আগত ব্যক্তিকে সম্মান দেখানো হয় এবং যদি তারা উঠে না দাঁড়ায় তাহলে সে ব্যক্তি অপমানিত বোধ করে কিংবা সে ব্যক্তি সুন্নাহ অনুসারে আচরণ জানে না, সেক্ষেত্রে আগত ব্যক্তির জন্যে উঠে দাঁড়ানোই অপেক্ষাকৃত ভালো আচরণ, কারণ এর দ্বারা তাদের মধ্যে একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হতে পারে এবং তাদের অন্তর থেকে ঘৃণা ও বিদ্বেষ দূর করে দিবে। কিন্তু লোকটি যদি সুন্নাহ অনুসারে আচরণ সম্পর্কে অভ্যস্ত থাকে তাহলে উঠে না দাঁড়ানো তাকে অপমানিত করবে না।
·
·
নবাগত ব্যক্তির জন্যে উঠে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সেই কথা বলা
হয়নি যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে বলেছেন, “যে ব্যক্তি
ইহাতে আনন্দ পায় যে, লোকজন তাহার
জন্য দাঁড়ানো অবস্থায় স্থির হয়ে থাকুক,
তবে সে যেন নিজের জন্য জাহান্নামে বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়”। (আবু দাউদ,তিরমিযি ২৭৫৫, আলবানী কর্তৃক সহীহ তিরমিযি)। এর মানে হল
(একথা বলা হয়েছে সেই ব্যক্তির জন্যে) কারও জন্য উঠে দাঁড়ানো হল অথচ সেই ব্যক্তি
নিজে বসে আছে, নবাগত ব্যক্তিকে স্বাগত জানানোর জন্য উঠে দাঁড়ানোর ব্যাপারে এই কথা
বলা হয়নি। একারণেই উলামাগণ এই দুই ধরণের উঠে দাঁড়ানোর মধ্যে পৃথকীকরণ করেছে্ন,
কারণ যারা নবাগত ব্যক্তিকে স্বাগত জানানোর জন্যে উঠে দাঁড়ায় তারা তার সাথে একইভাবে
(দাঁড়ানো) অবস্থায় আছে কিন্তু কোন ব্যক্তি নিজে বসে আছে অথচ লোকেরা তার জন্যে উঠে
দাঁড়ায় উভয় ঘটনা এক নয়।
সহীহ মুসলিমে প্রমাণিত আছে, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থতার দরুণ বসা অবস্থায় সালাতের ইমামতি করলেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন, তিনি তাঁদের বসতে বললেন এবং বললেন, “পারসিরা যেভাবে একে অপরকে সম্মান দেখায় সেভাবে আমাকে সম্মান প্রদর্শন করো না” [১]। আর তিনি নিজে বসা অবস্থায় তাদেরকে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করলেন, যেন সাহাবাগণের সাথে এতটুকু সাদৃশ্যও না থাকে যেভাবে পারস্য দেশের লোকেরা তাদের নেতাদের জন্য দাঁড়িয়ে অথচ তাদের নেতারা বসে থাকে।
পরিশেষে, যত বেশি সম্ভব সালাফগণের আচরণ ও রীতিনীতি অনুসরণ করাই হল সর্বোত্তম আচরণ।
যদি কোন ব্যক্তি এতে বিশ্বাস স্থাপন না করে এবং এই ধরণের আচরণে অভ্যস্ত না হয়, এবং যেভাবে (প্রচলিত পদ্ধতিতে) লোকেরা তাকে সম্মান দেখায় সেভাবে সম্মান প্রদর্শন না করাতে যদি সে আরও মন্দ কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে আমরা কম ক্ষতির কাজটি করে বেশি ক্ষতির থেকে নিজেদের রক্ষা করব এবং তাই করব যা ছোট উপকারের চেয়ে বড় উপকার করে থাকে ”।
- ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ’র উক্তি সমাপ্ত।
সহীহ মুসলিমে প্রমাণিত আছে, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থতার দরুণ বসা অবস্থায় সালাতের ইমামতি করলেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন, তিনি তাঁদের বসতে বললেন এবং বললেন, “পারসিরা যেভাবে একে অপরকে সম্মান দেখায় সেভাবে আমাকে সম্মান প্রদর্শন করো না” [১]। আর তিনি নিজে বসা অবস্থায় তাদেরকে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করলেন, যেন সাহাবাগণের সাথে এতটুকু সাদৃশ্যও না থাকে যেভাবে পারস্য দেশের লোকেরা তাদের নেতাদের জন্য দাঁড়িয়ে অথচ তাদের নেতারা বসে থাকে।
পরিশেষে, যত বেশি সম্ভব সালাফগণের আচরণ ও রীতিনীতি অনুসরণ করাই হল সর্বোত্তম আচরণ।
যদি কোন ব্যক্তি এতে বিশ্বাস স্থাপন না করে এবং এই ধরণের আচরণে অভ্যস্ত না হয়, এবং যেভাবে (প্রচলিত পদ্ধতিতে) লোকেরা তাকে সম্মান দেখায় সেভাবে সম্মান প্রদর্শন না করাতে যদি সে আরও মন্দ কোন পরিণতির দিকে নিয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে আমরা কম ক্ষতির কাজটি করে বেশি ক্ষতির থেকে নিজেদের রক্ষা করব এবং তাই করব যা ছোট উপকারের চেয়ে বড় উপকার করে থাকে ”।
- ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ’র উক্তি সমাপ্ত।
·
যে বিষয়টি এই আলোচনা আরও স্পষ্ট করে তুলতে পারে তা হল,
সহীহাইনে আলোচিত কা’ব ইবন মালিকের ঘটনাটি, যখন আল্লাহ্ তাঁর এবং তাঁর দুইজন
সঙ্গীর তাওবা কবুল করলেন, যেখানে বর্ণিত আছে, যখন কা’ব মসজিদে প্রবেশ করলেন, তালহা ইবন
উবাইদাল্লাহ উঠে দাঁড়ালেন, তাঁর দিকে দৌড়ে গেলেন এবং স্বাগত জানালেন অভিনন্দিত
করলেন আল্লাহর ক্ষমার কারণে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই
ঘটনাকে প্রত্যাখান করেননি। এই ঘটনা নির্দেশ করে যে, আগত ব্যক্তির জন্যে উঠে
দাঁড়ানো, তার সাথে হাত মিলানো এবং স্বাগত জানানো অনুমোদিত। এই বর্ণণাটিও অনুরূপ
যেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যা ফাতিমার ঘরে
প্রবেশ করলেন তিনি তাঁর জন্যে উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর হাত ধরলেন এবং তার নিজের বসার
স্থানে তাকে বসালেন। এবং যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে
ফাতিমা রদিয়াল্লাহু আনহা আসতেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত
ধরতেন এবং তাঁর নিজের বসার স্থানে তাকে বসাতেন। তিরমিযিতে সহীহ রূপে চিহ্নিত।
[১] জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ হতে
পড়লেন। আমরা তাঁর পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি বসে বসে সালাত আদায় করছিলেন। আবু
বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকদেরকে তাঁর তাকবীর উচ্চস্বরে শুনিয়ে দিচ্ছিলেন। তিনি
আমাদের দিকে মনোনিবেশ করে আমাদেরকে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেলেন। তিনি আমাদের
ইশারা করলেন। তদনুযায়ী আমরা বসে গেলাম। আমরা তাঁর সাথে বসে সালাত আদায় করলাম।
সালাম ফিরানোর পর তিনি বললেনঃ তোমরা পারস্য ও রুমের (এশিয়া মাইনর) লোকদের অনুরূপ
করতে যাচ্ছিলে, তাদের বাদশাহরা বসে থাকে আর তারা দাঁড়িয়ে থাকে। তোমরা কখনো এরূপ
করো না। সর্বদা তোমাদের ইমামদের অনুসরণ করবে। সে যদি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে,
তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর। সে যদি বসে সালাত আদায় করে তোমরাও বসে সালাত আদায়
কর। (মুসলিম ৮২৩ )
[২] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহত হলেন। সাহাবাদের কিছু সংখ্যক লোক তাঁকে দেখতে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে বসে সালাত আদায় করলেন। তাঁরা তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় শুরু করলে তিনি তাদেরকে ইশারায় বললেনঃ তোমরা বসে যাও। তারা বসে গেল। সালাত শেষ করে তিনি বললেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নিযুক্ত করা হয়। যে যখন রুকুতে যাবে তোমরাও তখন রুকুতে যাবে। সে যখন মাথা তুলবে তোমরাও তখন মাথা তুলবে। সে যখন বসে বসে সালাত আদায় করবে তোমরাও বসে বসে সালাত আদায় করবে। ( মুসলিম ৮২১ )
নিষিদ্ধ কিয়াম বা দাঁড়ানো
[২] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহত হলেন। সাহাবাদের কিছু সংখ্যক লোক তাঁকে দেখতে আসলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুয়া আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে বসে সালাত আদায় করলেন। তাঁরা তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় শুরু করলে তিনি তাদেরকে ইশারায় বললেনঃ তোমরা বসে যাও। তারা বসে গেল। সালাত শেষ করে তিনি বললেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নিযুক্ত করা হয়। যে যখন রুকুতে যাবে তোমরাও তখন রুকুতে যাবে। সে যখন মাথা তুলবে তোমরাও তখন মাথা তুলবে। সে যখন বসে বসে সালাত আদায় করবে তোমরাও বসে বসে সালাত আদায় করবে। ( মুসলিম ৮২১ )
নিষিদ্ধ কিয়াম বা দাঁড়ানো
আল্লাহর
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অর্থাৎ, যে লোক কামনা করে যে, মানুষ
তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক সে যেন তার ঠিকানা আগুনে করে নেয়। (আহমাদ)
আনাস রা. বলেছেনঃ অর্থাৎ, সাহাবায়ে কিরামের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক প্রিয় আর কেউ ছিলেন না। তথাপি তারা তাঁকে দেখতে পেলে সম্মানার্থে দাড়াতেন না, কারণ তারা জানতেন এমনটি তিনি অপছন্দ করেন। ( আহমদ ও তিরমিযি)
আনাস রা. বলেছেনঃ অর্থাৎ, সাহাবায়ে কিরামের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক প্রিয় আর কেউ ছিলেন না। তথাপি তারা তাঁকে দেখতে পেলে সম্মানার্থে দাড়াতেন না, কারণ তারা জানতেন এমনটি তিনি অপছন্দ করেন। ( আহমদ ও তিরমিযি)
১। হাদিস দুটি হতে এটা পরিস্কার বুঝা যায় যে, যে মুসলিম তার
সম্মানার্থে মানুষের দাঁড়ানোকে কামনা করে, তাহলে এ কাজ তাকে (জাহান্নামের) আগুনে
প্রবেশ করাবে। সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গভীরভাবে ভালবাসতেন। এতদসত্ত্বেও,
তাঁকে তাদের সম্মুখে আসতে দেখলে দাঁড়াতেন না। কারণ,
সে দাঁড়ানোকে তিনি খুব অপছন্দ করতেন।
২। বর্তমানে মানুষ একে অপরের জন্য দাঁড়াতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে উস্তাদ যখন শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করেন অথবা
ছাত্ররা তাকে কোথাও দেখতে পায় তখন তার সম্মানার্থে সকলে দাড়িয়ে যায়। কোনো ছাত্র না
দাড়ালে তাকে তিরস্কার ও ধিক্কার দেয়া হয়। দাড়ানো কালে শিক্ষকের নীরবতা অথবা না
দাড়ানো ছাত্রকে তিরস্কার করা এটাই প্রমাণ করে যে, তারা নিজেদের জন্য দাঁড়ানোকে
পছন্দ করেন। যদি অপছন্দ করতেন তাহলে এসব হাদিস বলে
দাড়ানোকে নিরুৎসাহিত করতেন। এবং যারা দাড়ায় তাদের নসীহত করতেন। এভাবে তার জন্য
বারে বারে দাঁড়ানোর ফলে তার অন্তরে আকাঙ্খা সৃষ্টি হয় যে, ছাত্ররা তার জন্য উঠে
দাঁড়াক। কেউ না দাঁড়ালে তার প্রতি অন্তরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি
হয়।
উল্লেখিত
হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী যারা দাড়িয়ে অপরকে সম্মান জানাচ্ছে তারা মূলত: সেসব মানুষ
শয়তানের সাহায্যকারী, যারা নিজের জন্য এভাবে দাঁড়ানো পছন্দ করে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে
নিষেধ করে বলেছেন : অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী
হয়ো না। (বুখারি)।
৩। অনেকে বলেন : আমরা শিক্ষক বা বুজুর্গদের সম্মানে দাড়াইনা বরং তাদের ইলমের সম্মানে দাঁড়াই। আমরা বলব : আপনাদের কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলম এবং তাঁর সাহাবিদের আদব সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ আছে? সাবারাতো নবীজীর সম্মানে দাঁড়াতেন না। ইসলাম এভাবে দাঁড়ানোকে সম্মান প্রদর্শন বলে মনে করে না। বরং হুকুম মান্য করা ও আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সম্মান। সালাম করা ও হাত মিলানই ইসলাম সম্মত সম্মান।
৩। অনেকে বলেন : আমরা শিক্ষক বা বুজুর্গদের সম্মানে দাড়াইনা বরং তাদের ইলমের সম্মানে দাঁড়াই। আমরা বলব : আপনাদের কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইলম এবং তাঁর সাহাবিদের আদব সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ আছে? সাবারাতো নবীজীর সম্মানে দাঁড়াতেন না। ইসলাম এভাবে দাঁড়ানোকে সম্মান প্রদর্শন বলে মনে করে না। বরং হুকুম মান্য করা ও আনুগত্যের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সম্মান। সালাম করা ও হাত মিলানই ইসলাম সম্মত সম্মান।
৪। অনেক সময় দেখা যায়, মজলিসে কোনো ধনী লোক প্রবেশ করলে মানুষ তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু দরিদ্র ব্যক্তির জন্য কেউ দাঁড়ায় না। এমনও হতে পারে, আল্লাহ তাআলার কাছে ঐ দরিদ্রের সম্মান সে ধনী ব্যক্তির চেয়ে বেশী। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন : অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাবান যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। ( সূরা হুজুরাত, ৪৯: আয়াত ১৩)
অনেকে
ভাবে যদি আমরা না দাঁড়াই তাহলে আগমনকারী মনে ব্যাথা পাবেন । তাদের
এই বলে বুঝান দরকার যে, দাঁড়ানটাই সুন্নতের বিপরীত। বরং
হাত মিলান, সালাম করাই সুন্নাত।
শরিয়ত সম্মত কিয়াম বা দাঁড়ান
অনেক সহিহ হাদিস ও সাহাবিদের আমল দ্বারা প্রমাণিত যে, আগমণকারীর অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়ানো জায়েয। আসুন আমরা সে হাদিসগুলো বুঝতে চেষ্টা করি এবং সেমতে আমল করারও ।
১। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আদরের মেয়ে
ফাতিমা রা. আপন পিতার খিদমতে আসলে নবীজী তার জন্য দাঁড়াতেন।
অনুরূপভাবে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যেতেন, তখন তিনিও
উঠে দাঁড়াতেন। এটা জায়েয এবং জরুরি। কারণ, এটি অতিথির সাথে সাক্ষাত ও তার একরামের জন্য।
রাসূলে
করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের
উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে। (বুখারি
ও মুসলিম)
তবে এটা শুধুমাত্র বাড়ীর মালিকের জন্য প্রযোজ্য অন্য কারো জন্য নয়।
তবে এটা শুধুমাত্র বাড়ীর মালিকের জন্য প্রযোজ্য অন্য কারো জন্য নয়।
২। অন্য হাদীসে আছে : অর্থাৎ, তোমাদের সর্দারের জন্য দাঁড়াও। ( বুখারি ও মুসলিম)। অন্য
রিওয়ায়েতে আছে : (এবং তাকে নামিয়ে আন)
এই হাদিসের কারণ হল : সা’দ রা. আহত ছিলেন। তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের বিচার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি গাধার উপর উঠলেন। যখন তিনি পৌঁছলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের বললেন : তোমরা তোমাদের সর্দারের জন্য উঠে দাঁড়াও এবং তাকে নামিয়ে আন। তাই তারা দাঁড়ালেন এবং নামিয়ে আনলেন। এখানে আনসারদের সর্দার সা’দ রা.-কে সাহায্য করার জন্য দাঁড়ানোর প্রয়োজন ছিল, কারণ তিনি ছিলেন আহত। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং আনসাররা ব্যতীত অন্য কোনো সাহাবি দাঁড়াননি।
এই হাদিসের কারণ হল : সা’দ রা. আহত ছিলেন। তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের বিচার করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি গাধার উপর উঠলেন। যখন তিনি পৌঁছলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের বললেন : তোমরা তোমাদের সর্দারের জন্য উঠে দাঁড়াও এবং তাকে নামিয়ে আন। তাই তারা দাঁড়ালেন এবং নামিয়ে আনলেন। এখানে আনসারদের সর্দার সা’দ রা.-কে সাহায্য করার জন্য দাঁড়ানোর প্রয়োজন ছিল, কারণ তিনি ছিলেন আহত। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং আনসাররা ব্যতীত অন্য কোনো সাহাবি দাঁড়াননি।
৩। সাহাবি কা’ব
ইবনে মালেক রা. সম্বন্ধে বর্ণিত আছে, তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন, সাহাবাগণ সকলে বসা
ছিলেন। তিনি
প্রবেশ করলে তালহা রা. তার তাওবা কবুল হয়েছে মর্মে সুসংবাদটি প্রদানের উদ্দেশ্যে
দাঁড়িয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন। তাবুক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করার কারণে কা’ব
রা. ও তার দুই সাথীর সাথে বয়কট করা হয়েছিল। পরে তাদের তাওবা কবুল হয়। এখানে
দৃশ্যত: দেখা যাচ্ছে তালহা রা. কা’ব রা.-এর
উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়েছেন, প্রেক্ষাপটের বিচারে এ দাঁড়ানোতে দোষের কিছু নেই এবং এটা
জায়েয। কারণ,
এতে বিমর্ষ ব্যক্তিকে খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এবং আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত
প্রাপ্তিতে আনন্দ প্রকাশ করা.
আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝার এবং আমল করার তেৌফিক দান করুন(আমিন)
আহলে হাদিসের প্রকৃত পরিচয়
ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে যে কিছু লোক না পড়ে না জেনে আহলে হাদিস সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করে থাকেন , তারা আহলে হাদিসের অনুসারীদেরকে ইংরেজদের দালাল বলে অথচ ইতিহাস কি বলে তা খেয়াল করে না এ জন্য সেই সকল লোকদের সবিনয় অনুরোধ করবো আপনারা জনাব আব্বাস আলী খান এর "বঙে মুসলিম জাতির ইতিহাস "বইটি পড়বেন বইটি পাবেন www.banglainternet.com সাইটে ।
আহলে হাদিসের উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জেনে নিন
পৃথিবীর সবচেয়ে দূরদর্শি চিন্তানায়ক বিশ্বনাবী মুহাম্মাদ সা. বলেছেন, ‘বানী ইস্রায়েলরা ৭২ ফির্কায় বিভক্ত হয়েছিল আর আমার উম্মত ৭৩ ফির্কায় বিভক্ত হবে। তন্মোধ্যে ৭২টা ফির্কা জাহান্নামে যাবে এবং একটি ফির্কা জান্নাতে প্রবেশ করবে। ঐ জান্নাতি ফির্কা তারা যারা আমার এবং আমার সাহাবাদের আদর্শে কায়েম থাকবে’ (তিরমিযী, আবু দাউদ, আহমাদ, মিশকাত)।
বিশ্বের সমস্ত পীরের মাথার মণি আব্দুর কাদের জিলানী রহ. বলেন জাহান্নাম থেকে নিজাত পাওয়া ঐ দলটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দল। যার একটি মাত্র নাম আছে, তা হল আহলে হাদীস’ (গুনইয়াতুত ত্বলিবীন, করাচী ছাপা, ৩০৯ পৃষ্ঠা)।
রিজাল শাস্ত্রের অদ্বিতীয় মনীষী হাফেয যাহাবী রহ. বিখ্যাত তা’বেয়ী ইমাম শা’বীর এক উক্তির ব্যাখ্যায় বলেন- ‘ইমাম শা’বীর মতে রাসুল সা. এর সমস্ত সাহাবাগন আহলে হাদিস ছিলেন’ (তাযকিরাতুল হুফফায, ১ম খন্ড, ১ম সংস্করন, ৭৭ পৃষ্ঠা ও দ্বিতীয় সংস্করনের ৮৩ পৃষ্ঠা)।
চার মাহহাবের অন্যতম বরেন্য নেতা ইমাম শাফিয়ি রহ. বলেন-‘আহলে হাদিসরা প্রত্যেক যুগে সাহাবীদের ন্যায়। তাই আমি যখন কোন আহলে হাদিসকে দেখি তখন রাসুলুল্লাহ সা. এর কোন সাহাবীকেই যেন দেখি’(মীযানে শা’রানী; ১ম খন্ড ৫০ পৃষ্ঠা)।
বিশ্বের সমস্ত মুজাহিদদের শিরমণি ও বিশ্বের অতুলনীয় প্রতিভা ইমাম ত্যাইমিয়াহ রহ. বলেন-‘পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের মধ্যে ইসলামের যে মান, ইসলামপন্থীদের মধ্যে আহলে হাদিসদের সেই মান’ (মিনহাজুস সুন্নাহ; ২য় খন্ড ১৭৯ পৃষ্ঠা)।
মহামান্য ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন-‘ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বাল ও সুফয়ান ইবনে উয়ায়নাহ আহলে হাদিস ছিলেন’(রিহলাতুশ শাফিয়ি ১৪ পৃষ্ঠা)।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস সুফয়ান ইবনে উয়ায়নাহ বলেন-‘আমাকে আবু হানিফা রাহ. আহলে হাদিস বানিয়েছেন’ (হাদায়িকুল হানফিয়াহ;১৩৪ পৃষ্ঠা)। অতএব যিনি অপরকে আহলে হাদিস বানান সেই আবু হানিফা রহ. নিজে কি আহলে হাদিস ছিলেন না?
সুরা যুমারের ১৩ নং আয়াত ও সুরা আন নাজমের ৫৯ নং আয়াত, সুরা তুরের ৩৪ নং আয়াত সহ কুর’আনের মোট চৌদ্দটি আয়াতে কুর’আনকেই ‘হাদীস’ বলা হয়েছে। আর হাদিশাস্ত্র বিশারদদের পরিভাষায় বিশ্বনাবীর কথা বার্তা এবং কাজ কর্ম ও মৌন সমর্থনকে হাদিস বলা হয়। অতএব যারা কুর’আন ও হাদিস অনুসরন করে তারা নিজেদেরকে আহলে হাদিস (কুর’আন ও হাদিস ওয়ালা) বলে পরিচয় দিলে ক্ষতি কি?
আহলেহাদীছ-এর পরিচয় :
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ
হাদীছের নিঃশর্ত অনুসারী ব্যক্তিকে ‘আহলেহাদীছ’ বলা হয়। যিনি
জীবনের সর্বক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও
ছহীহ হাদীছের সিদ্ধান্তকে শর্তহীনভাবে মেনে নিবেন এবং
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে
কেরামের তরীকা অনুযায়ী নিজের
সার্বিক জীবন গড়ে তুলতে
সচেষ্ট হবেন, কেবলমাত্র তিনিই
এ নামে অভিহিত হবেন।
এটি ইসলামের আদিরূপ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন,
যা ছাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে এ
যাবৎ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিচালিত হয়ে
আসছে। উল্লেখ্য যে, আহলেহাদীছ হওয়ার
জন্য রক্ত, বর্ণ, ভাষা
ও অঞ্চল শর্ত নয়।
ছাহাবায়ে কেরাম হ’লেন
জামা‘আতে আহলেহাদীছের প্রথম
সারির সম্মানিত দল। যাঁরা এ
নামে অভিহিত হ’তেন।
যেমন প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সাঈদ
খুদরী (রাঃ) কোন মুসলিম
যুবককে দেখলে খুশী হয়ে
বলতেন, রাসূল (ছাঃ)-এর
অছিয়ত অনুযায়ী আমি তোমাকে ‘মারহাবা’
জানাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে তোমাদের
জন্য মজলিস প্রশস্ত করার
ও তোমাদেরকে হাদীছ বুঝাবার নির্দেশ
দিয়ে গেছেন। কেননা তোমরাই
আমাদের পরবর্তী বংশধর ও পরবর্তী
আহলুল হাদীছ’।[1]
‘বড় পীর’ বলে খ্যাত
শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী
(মৃঃ ৫৬১ হিঃ) ‘নাজী’
ফের্কা হিসাবে আহলেসুন্নাত ওয়াল
জামা‘আতের বর্ণনা দেওয়ার
পর তাদের বিরুদ্ধে বিদ‘আতীদের ক্রোধ বর্ণনা
করতে গিয়ে বলেন, বিদ‘আতীদের নিদর্শন হ’ল আহলেহাদীছদের গালি
দেওয়া ও বিভিন্ন নামে
তাদের সম্বোধন করা। এগুলি সুন্নাতপন্থীদের
বিরুদ্ধে তাদের দলীয় বিদ্বেষ
ও অন্তর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন কিছুই নয়।
কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামা‘আতের অন্য কোন
নাম নেই একটি নাম
ব্যতীত। সেটি হ’ল
‘আছহাবুল হাদীছ’ বা আহলেহাদীছ।[2]
স্পেনের বিখ্যাত মনীষী হিজরী পঞ্চম
শতকের ইমাম ইবনু হযম
আন্দালুসী (৩৮৪-৪৫৬ হিঃ)
বলেন, আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা‘আত
যাদেরকে আমরা হকপন্থী ও
তাদের বিরোধীদের বাতিলপন্থী বলেছি, তারা হলেন,
(ক) ছাহাবায়ে কেরাম (খ) তাদের
অনুসারী শ্রেষ্ঠ তাবেঈগণ (গ) আহলেহাদীছগণ (ঘ)
ফক্বীহদের মধ্যে যাঁরা তাঁদের
অনুসারী হয়েছেন যুগে যুগে
আজকের দিন পর্যন্ত (ঙ)
এবং প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সকল
‘আম জনসাধারণ, যারা তাঁদের অনুসারী
হয়েছে’।[3]
ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বলেন,
মুসলমানদের মধ্যে আহলেহাদীছদের অবস্থান
এমন মর্যাদাপূর্ণ, যেমন সকল জাতির
মধ্যে মুসলমানদের অবস্থান’।[4]
ভারতগুরু শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী
(১১১৪-৭৬/১৭০৩-৬২খৃঃ)
বলেন, চতুর্থ শতাব্দী হিজরীর
পূর্বে কোন মুসলমান নির্দিষ্টভাবে
কোন একজন বিদ্বানের মাযহাবের
তাক্বলীদের উপর সংঘবদ্ধ ছিল
না’।[5] হাফেয
ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৫১হিঃ) বলেন,
মাযহাবী তাক্বলীদের এই বিদ‘আত
আবিষ্কৃত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ভাষায় নিন্দিত
৪র্থ শতাব্দী হিজরীতে[6] শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী
(রহঃ) বলেন, আববাসীয় খলীফা
হারূনুর রশীদের খেলাফতকালে (১৭০-৯৩/৭৮৬-৮০৯
খৃঃ) আবু হানীফা (রহঃ)-এর প্রধান শিষ্য
আবু ইউসুফ (রহঃ) প্রধান
বিচারপতি থাকার কারণে ইরাক,
খোরাসান, মধ্য তুর্কিস্তান প্রভৃতি
অঞ্চলে হানাফী মাযহাবের বিস্তৃতি
ঘটে’।[7] পরে
হানাফীরা শাফেঈদের বিরুদ্ধে মোঙ্গলবীর হালাকু খাঁকে ডেকে
আনলে ৬৫৬/১২৫৮ খৃষ্টাব্দে
বাগদাদের আববাসীয় খেলাফত ধ্বংস হয়ে
যায়।
এ সময়ের কিছু পূর্বে
গযনীর সুলতান মোহাম্মাদ ঘোরীর
তুর্কী গোলাম কুতুবুদ্দীন আইবক
ও ইখতিয়ারুদ্দীন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজীর মাধ্যমে ৬০২
হিঃ/১২০৩ খৃষ্টাব্দে দিল্লী
হ’তে বাংলা পর্যন্ত
সামরিক বিজয় সাধিত হয়।
এঁরা ছিলেন নওমুসলিম তুর্কী
হানাফী। যাতে মিশ্রণ ঘটেছিল
তুর্কী, ঈরানী, আফগান, মোগল,
পাঠান এবং স্থানীয় হিন্দু
ও বৌদ্ধ আক্বীদা ও
রীতি-নীতি সহ অসংখ্য
ভারতীয় কুসংস্কার। ছাহাবা, তাবেঈন এবং আরব
বণিক ও মুহাদ্দিছগণের মাধ্যমে
ইতিপূর্বে প্রচারিত বিশুদ্ধ ইসলামের সাথে যার খুব
সামান্যই মিল ছিল’।
এ সময়কার অবস্থা বর্ণনা
করে খ্যাতনামা ভারতীয় হানাফী বিদ্বান
আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী (১৮৪৮-৮৬ খৃঃ) বলেন,
‘ফিক্বহ ব্যতীত লোকেরা কুরআন
ও হাদীছ থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিয়েছিল। ...আহলেহাদীছগণকে তারা জানত না।
কেউ কেউ ‘মিশকাত’ পড়লেও
তা পড়ত বরকত হাছিলের
জন্য, আমল করার জন্য
নয়। তাহকীকী তরীকায় নয়। বরং
তাকলীদী তরীকায় ফিক্বহের জ্ঞান
হাছিল করাই ছিল তাদের
লক্ষ্য’।[8]
সুলায়মান নাদভী (১৮৮৪-১৯৫৩)
বলেন, ‘তুর্কী বিজয়ী যারা
ভারতে এসেছিলেন, দু’চারজন সেনা
অফিসার ও কর্মকর্তা বাদে
তাদের কেউই না ইসলামের
প্রতিনিধি ছিলেন, না তাদের
শাসন ইসলামী নীতির উপর
পরিচালিত ছিল। এরা ছিলেন
আরব বিজয়ীদের থেকে অনেক দূরে’।[9]
তাই বলা চলে যে,
মধ্য এশিয়া থেকে উত্তর
ভারত হয়ে তুর্কী-ঈরানী
সাধক-দরবেশদের মাধ্যমে ও রাজশক্তির ছত্রছায়ায়
পরবর্তীতে বাংলাদেশে যে ইসলাম প্রচারিত
হয়, তা ইতিপূর্বে আরব
বণিক ও মুহাদ্দিছ ওলামায়ে
দ্বীনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগত প্রাথমিক যুগের
মূল আরবীয় ইসলাম হ’তে বহুলাংশে পৃথক
ছিল। ফলে হানাফী শাসক
ও নবাগত মরমী ছূফীদের
প্রভাবে বাংলাদেশের মুসলমানেরা ক্রমে হানাফী ও
পীরপন্থী হয়ে পড়ে। তারা
বহুবিধ কুসংস্কার এবং শিরক ও
বিদ‘আতে অভ্যস্ত হয়ে
পড়ে। এভাবে এদেশের মূল
শরীয়তী ইসলাম পরবর্তীতে লৌকিক
ইসলামে পরিণত হয়। যার
ফলশ্রুতিতে ঘোড়াপীর, তেনাপীর, ঢেলাপীর প্রভৃতি অসংখ্য ভুয়া পীর
বাংলার মুসলমানের পূজা পায়।[10]
শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলেন, হানাফী
মাযহাবের ক্বিয়াসী ফৎওয়া সমূহ এবং
ফিক্বহ ও উছূলে ফিক্বহের
নামে যেসব মাসআলা-মাসায়েল
ও আইনসূত্র সমূহ লিখিত হয়েছে,
সেগুলিকে ইমাম আবু হানীফা
ও তাঁর দুই শিষ্যের
দিকে সম্বন্ধিত করার ব্যাপারে একটি
বর্ণনাও বিশুদ্ধ নয়’।[11] তিনি
‘আহলুল হাদীছ ও আহলুর
রায়-এর পার্থক্য’ শিরোনামে
তাঁর জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্র
মধ্যে (১/১৪৭-৫২)
আহলেহাদীছ বিদ্বানগণের দলীল গ্রহণের নীতিমালা
বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি
মযহাবপন্থী মুক্বাল্লিদগণের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ
করে বলেন, ‘তারা মনে
করে যে, একটি মাসআলাতেও
যদি তাদের অনুসরণীয় বিদ্বানের
তাক্বলীদ হতে সে বেরিয়ে
আসে, তাহলে হয়তবা সে
মুসলিম মিল্লাত থেকেই খারিজ হয়ে
যাবে। ঐ বিদ্বান যেন
একজন নবী, যাকে তার
কাছে প্রেরণ করা হয়েছে’।[12]
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি
ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন
করে, ঐ ব্যক্তি আমার
নিকট অধিক প্রিয় ঐ
ব্যক্তির চাইতে, যে ব্যক্তি
রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে
না। কেননা রাফ‘উল
ইয়াদায়েনের হাদীছ সংখ্যায় অধিক
এবং অধিকতর মযবুত’।[13]
হানাফী ও শাফেঈ মাযহাবের
বিশ্বস্ত ফিক্বহ গ্রন্থ হেদায়া,
আল-ওয়াজীয প্রভৃতির অমার্জনীয়
হাদীছবিরোধিতা সম্পর্কে আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী
বলেন, এগুলি মওযূ বা
জাল হাদীছ দ্বারা পরিপূর্ণ।[14]
ইমাম ইবনু দাক্বীকুল ঈদ
(মৃ: ৭০২ হিঃ) চার
মাযহাবে প্রচলিত ছহীহ হাদীছ বিরোধী
ফৎওয়াসমূহের একটি বিরাট সংকলন
তৈরী করেছিলেন। যার ভূমিকাতে তিনি
ঘোষণা করেছেন যে, এই
মাসআলাগুলিকে চার ইমামের দিকে
সম্বন্ধ করা ‘হারাম’।[15]
কারণ চার ইমামের প্রত্যেকে
‘আহলেহাদীছ’ ছিলেন এবং তারা
প্রত্যেকে বলে গেছেন, যখন
তোমরা ছহীহ হাদীছ পাবে,
জেনে রেখ সেটাই আমাদের
মাযহাব’।[16] আহলেহাদীছগণ তাঁদের
সেকথাই মেনে চলেন এবং
তাদের সার্বিক জীবন পবিত্র কুরআন
ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী
গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সুমতি দিন। আমীন!
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)